আরবে যখন কোরআন পেশ করা হয়,তখন প্রত্যেকেই জানতো ইলাহ অর্থ কি,রব কাকে বলা হয়।কারণ তাদের কথাবার্তায় এ শব্দদ্বয় পূর্ব হতে প্রচলিত ছিল।তারা জানত এ শব্দগুলোর অর্থ কি,কি এর তাৎপর্য।কিন্তু কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় এ শব্দগুলোর যে মৌল অর্থ প্রচলিত ছিল,পরবর্তী শতকে ধীরে ধীরে তা পরিবর্তিত হতে থাকে।শেষ পর্যন্ত এক-একটি শব্দ তার সম্পূর্ণ ব্যপকতা হারিয়ে একান্ত সীমিত বরং অস্পষ্ট অর্থের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে পরে।
এর কারন ছিলো (1)আরবী ভাষার প্রতি সঠিক স্পৃহার অভাব (2)দ্বিতীয় কারণ ছিল ইসলামী সমাজে যেসব ব্যক্তির উদ্ভব হয়েছে,তাদের কাছে ইলাহ,রব,দ্বীন,ইবাদতের সে অর্থ অবশিষ্ট ছিলোনা,যা কোরআন নাযিল হওয়ার সময় অমুসলিম সমাজে প্রচলিত ছিল।
এ কারনে পরবর্তী কালের অভিধান ও তাফসীর গ্রন্থে অধিকাংশ কোরানিক শব্দের ব্যখ্যা করা হয়েছে আভিধানিক অর্থের পরিবর্তে এমন সব অর্থে যা পরবর্তী কালের মুসলমানরা বুঝতো।যেমন:
ইলাহ শব্দকে মূর্তি ও দেবতার সমার্থক করা হয়েছে।লালন-পালন কর্তা বা পরওয়ারদেগার এর প্রতিশব্দ করা হয়েছে রব'কে,ইবাদতের অর্থ করা হয়েছে পূজা-উপাসনা,ধর্ম,মযহাব এবং রিলিজিয়ান এর সমার্থজ্ঞাপক শব্দ করা হয়েছে দীনকে।তাগুত-এর তর্জমা করা হয়েছে মূর্তি বা শয়তান।
ফল দাঁড়ালো এই যে,কোরআনের মৌল উদ্দেশ্য অনুধাবন করাই লোকের পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়লো।
এটা সত্য যে,কেবল এ চারটি মৌলিক পরিভাষার তাৎপর্যে আবরণ পরে যাওয়ার কারনে কোরআনের তিন-চতুর্থাংশের চেয়েও বেশী শিক্ষা বরং তার সত্যিকার স্পিরিটই দৃষ্টি থেকে প্রচ্ছন্ন হয়ে যায়।ইসলাম কবুল করা সত্ত্বেও মানুষের আকীদা-আমল-বিশ্বাস ও কর্মে যে সকল ত্রুটি পরিলক্ষিত হচ্ছে,এটা তার অন্যতম প্রধান কারন।
সুতরাং কোরআনুল করীমের মৌল শিক্ষা এবং তার সত্যিকার লক্ষ্য স্পষ্ট করে তুলে ধরার জন্য এর পরিভাষাগুলোর সঠিক ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা একান্ত জরুরী।
(কোরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা,সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী,পৃষ্ঠা ১১-১৩(সূচনা)থেকে সংগৃহীত)