ইসলামী আন্দোলন :: সাফল্যের শর্তাবলী [পর্ব ৩]

৪) মৌলিক ও অসৎ গুণাবলী

ক) গর্ব ও অহংকারঃ


সমস্ত সৎগুণের মুলোৎপাটনকারী প্রধানতম ও সবচাইতে মারাত্মক অসৎ গুণ হচ্ছে গর্ব অহংকার, আত্মাভিমান ও নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রকাশ। এটি একটি শয়তানী প্রেরণা এবং শয়তানী কাজেরই উপযোগী হতে পারে। শ্রেষ্ঠত্ব একমাত্র আল্লাহর সাথে সংযুক্ত। (তাই এ অসৎগুণ সহকারে কোন সৎকাজ করা যেতে পারে না)। 

বান্দাহর মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব ও অহংকার একটি নির্জলা মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। যে ব্যক্তি বা দল এ মিথ্যা গর্ব-অহংকারে লিপ্ত থাকে সে খোদার সব রকমের সমর্থন থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ আল্লাহ নিজের বান্দাহর মধ্যে এ বস্তুটিই সবচাইতে বেশী অপছন্দ করেন। ফলে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কোন ক্রমেই সঠিক পথ লাভ করতে পারে না। সে অনবরত মূর্খতা ও নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিতে থাকে। এভাবে অবশেষে ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়। ফলে মানুষের সাথে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সে যতই গর্ব ও অহংকারের প্রকাশ করে ততই তার বিরুদ্ধে ঘৃণার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এমনকি অবশেষে সে মানুষের চোখে ঘৃণিত হয়ে এমন পর্যায়ে উপনীত হয় যার ফলে মানুষের ওপর তার কোন নৈতিক প্রভাব কায়েম থাকে না। 

ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী [পর্ব ২]

২) দলীয় গুণাবলী 


ক) ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসাঃ


এ ধরণের দলের মধ্যে সর্বপ্রথম যে গুণটি থাকতে হবে তা হচ্ছে, তার অর্ন্তভূক্ত প্রত্যেক ব্যক্তিকে পরস্পরের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। প্রাসাদের প্রত্যেকটা ইট মজবুতভাবে একটার সাথে আরেকটা মিশে থাকলে তবে প্রাসাদটি মজবুত হয়। সিমেন্ট এ ইটগুলোকে পরস্পরের সাথে মিশিয়ে রাখে। তেমনিভাবে কোন দলের সদস্যদের দিল পরস্পরের সাথে একসূত্রে গাঁথা থাকলে তবেই তা ইস্পাত প্রাচীরে পরিণত হয়। আর এ দিলগুলোকে একসূত্রে গাঁথতে পারে আন্তরিক ভালোবাসা, পারস্পারিক কল্যাণাকাঙ্খা, সহানুভূতি ও পরস্পরের জন্য ত্যাগ স্বীকার। ঘৃণাকারী দিল কখনো পরস্পরে মিলেমিশে থাকতে পারে না। মোনাফেকী ধরণের মেলামেশা কখনো সত্যিকার ঐক্য সৃষ্টি করতে পারে না। স্বার্থবাদী ঐক্য মোনাফেকীর পথ প্রশস্ত করে। আর নিছক একটি শুষ্ক-নীরস ব্যবসায়িক সম্পর্ক কোন সৌহার্দ্য ও সহযোগিতার ভিত্তিতে পরিণত হতে পারে না। কোন পার্থিব স্বার্থ এ ধরণের সম্পর্কহীন লোকদেরকে একত্রিত করলেও তারা নিছক বিক্ষিপ্ত হবার জন্যই একত্রিত হয় এবং কোন মহৎ কাজ সম্পাদনের পরিবর্তে নিজেদের মধ্যে হানাহানী করেই শেষ হয়ে যায়। 

যখন একদল নিঃস্বার্থ চিন্তার অধিকারী ও জীবনোদ্দেশ্যের প্রতি প্রগাঢ় অনুরাগী লোক একত্রিত হয় অতঃপর চিন্তার এই নিঃস্বার্থতা ও উদ্দেশ্যের প্রতি এ অনুরাগ তাদের নিজেদের মধ্যে আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সৃষ্টি করে কেবল মাত্র তখনই একটি মজবুত ও শক্তিশালী দলের সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরণের দল আসলে ইস্পাত প্রাচীরের ন্যায় অটুট হয়। শয়তান এর মধ্যে ফাটল ধরাবার কোন পথই পায় না। আর বাহির থেকে বিরোধীতার তুফান এনে এর বিরুদ্ধে দাঁড় করালেও একে স্থানচ্যুত করতে পারে না।

ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী [পর্ব ১]

যারা সত্যিই একটি ইসলামী সমাজ কায়েম করতে চান তাদের 

সর্বপ্রথম ভালোভাবে উপলব্ধি করতে হবে, আমাদের জাতির মধ্যে একটি আদর্শ ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খার মোটেই অভাব নেই। আসল অভাব আগ্রহ ও উদ্যোগ গ্রহণের এবং তার চাইতে বেশী অভাব যোগ্যতার। এ কাজের জন্য যে মৌলিক গুণাবলীর প্রয়োজন অধিকাংশ লোকের মধ্যে তা অনুপস্থিত।


দ্বিতীয় যে বিষটির প্রতি তীক্ষ নজর রাখতে হবে তা হচ্ছে আমাদের জাতির সমগ্র প্রভাবশালী অংশ অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমাজে বিকৃতি ও ভাঙ্গন সৃষ্টিতে মুখর। আর যারা বিকৃতি ও ভাঙ্গনের কাজে লিপ্ত নেই তারাও সৃষ্টি ও বিন্যাসের চিন্তামুক্ত। সমাজ সংস্কার ও গঠনের প্রচেষ্টারত ব্যক্তিদের সংখ্যা মুষ্টিমেয়। 


তৃতীয় যে বিষয়টি থেকে উচিৎ নয় সেটি হচ্ছে, বর্তমান যুগে সমাজ জীবন পরিগঠণ ও ভাঙ্গার বৃহত্তম শক্তি হচ্ছে সরকার। আর যেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত থাকে সেখানে জনগনের উপযুক্ততা বা অনুপযুক্ততা ব্যক্তিদের হাতে শাসন ক্ষমতা সোপর্দ করার ওপরই সরকারের উপযুক্ত বা অনুপযুক্ত পূর্ণতঃ নির্ভরশীল। ভাঙ্গার কাজে যারা লিপ্ত থাকে তারা জনগণ যাতে কোনদিন নির্ভুল নির্বাচনের যোগ্য না হতে পারে সেজন্যে জনগণকে প্ররোচিত করার কাজে যতো শক্তি ব্যয় করে অন্য কাজে ততো ব্যয় করে না।